ব্যাচেলর বললেই ‘দরজা বন্ধ’ | Bachelor says 'door closed'



রাজধানীতে শিক্ষার্থী, ব্যাচেলরদের বাসা ও ফ্লাট ভাড়া পাওয়ার ক্ষেত্রে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। বেশিরভাগ বাড়ির মালিক ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া দিতে চান না।

 বাসা ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে নিম্নমানের রুম, সবচেয়ে ওপরের তলা, নয়তো বাড়ির একেবারে নিচের তলা ভাড়া দেন বাড়িওয়ালারা। কেননা এসব রুমে সাধারণত কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতে চাননা।

জানা গেছে, ঢাকায় এক সময় ব্যাচেলর থেকে বর্তমানে বাড়ির মালিক হয়েছেন সেই ব্যক্তিটিও ব্যাচেলরদের কাছে বাসা ভাড়া দিতে অনাগ্রহী। পাশাপাশি কোনো ধরনের আইনের তোয়াক্কা না করেই ব্যাচেলরদের থেকে আদায় করা হয় অতিরিক্ত ভাড়া। রাতে ফিরতে বেশি রাত হলে থাকতে হয় বাইরে। ব্যাচেলরদের জন্য নেই কোনো পার্কিং ব্যবস্থা।

অনেকক্ষেত্রে বাড়ির মালিকের মতের বিরুদ্ধে গেলেই পেতে হয় বাড়ি ছাড়ার নোটিশ! যদিও আমাদের দেশের বিশাল একটা অংশ ভাড়া বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকলেও অধিকাংশই জানেন না যে, ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১’ নামে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত আইন রয়েছে।

ব্যাচেলররা বলছেন, এসব সমস্যা দূর করতে হলে মেস ভাড়ার নীতিমালা তৈরি করে মালিকদের ভাড়া দিতে উদ্বুদ্ধকরণ করতে হবে। মেস মেম্বারদের প্রতি বাড়ির মালিকদের শোভনীয় আচরণ নিশ্চিত এবং শহরের উপকণ্ঠে পরিকল্পিত মেস নগরী গড়ে তোলারও দাবি উঠেছে। এদিকে বাড়ির মালিকদের অভিযোগ বাড়িতে ব্যাচেলর আছে জানতে পারলে কেউ ফ্যামিলি বাসা ভাড়া নিতে চায় না। এছাড়াও ব্যাচেলররা বাড়ির পরিবেশ নষ্ট, ঘরবাড়ির সৌন্দর্যহানি করেন।

‘বাংলাদেশ মেস অর্গানাইজেশন’-এর তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় প্রায় ১৫ লাখ মেস রয়েছে। আজিমপুর, ধানমণ্ডি, লালমাটিয়া, ফার্মগেটের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোয় অধিকাংশ মেস এবং হোস্টেল অবস্থিত। এসব এলাকায় দশ হাজারের বেশি ব্যাচেলরের বসবাস। দক্ষিণ কমলাপুরের সর্দার কলোনি ঢাকার সবচেয়ে বড় ব্যাচেলর মেস। এখানে একেকটি কক্ষে ৫ থেকে ৬ জন বসবাস করেন। মাথাপিছু ভাড়া নেয়া হয় প্রতিমাসে ১৪০০ থেকে ৩ হাজার টাকা।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও ভাড়াটিয়া পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এমন সব শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০-১৫ শতাংশের স্থান হয় বিভিন্ন হোস্টেল ও হলগুলোয়। বাকি ৮৫-৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীই বাধ্য হন বাইরে বাসাভাড়া করে থাকতে। সে হিসেবে রাজধানীতে মোট শিক্ষার্থী ভাড়াটিয়ার সংখ্যা ২০ লাখের কাছাকাছি। আর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এমন ব্যাচেলরদের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এ ছাড়া 

রয়েছেন গার্মেন্টকর্মীদের একটি বিশাল অংশ। এদের সংখ্যা ৫-৬ লাখ হবে।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবু নাঈম নোমান বলেন, ব্যাচেলরদের মোটামুটি ভালো একটা বাসা পাওয়া যেন সোনার হরিণের মতোই। ভাসা ভাড়া নিতে গেলে আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন বাসা ভাড়া দিতে চায় না, দিলেও ৬, ৭, ৮ তলায় তাও ফ্যামিলি বাসার দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয়। বাসা ভাড়া নিতে গেলে বা বাসায় উঠার পর ভাড়া তুলতে আসলে ভাড়া দিতে দু-একদিন বিলম্ব হলে বাড়িওয়ালারা খারাপ ব্যবহার করেন। এমনকি বাসায় নিয়মিত পানি, গ্যাস, থাকে না। জানাতে গেলেও অনেক সময় হেনস্তার শিকার হতে হয় ।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মো. রায়হান। তিনি বলেন, আমরা কয়েকজন ব্যাচেলর মিলে ধানমণ্ডির একটি বাসার ২ তলার একটি ফ্লাটে থাকি। একই ফ্লাটে ফ্যামিলি ভাড়াটিয়ার তুলনায় আমাদের থেকে প্রায় দ্বিগুণ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। অধিকাংশ সময় পানি থাকে না, নেই নিরাপত্ত প্রহরী, নেই সিসি ক্যামেরা, কোনো দিন ভুলক্রমে যানজটে পড়ে যদি বাসায় আসতে রাত ১১টার পার হয় কিছুতেই ঢুকতে পারি না। এমনটি হলে কোনো বন্ধুর বাসায় রাত কাটাতে হয়। বাড়িওয়ালা আমাদের কাছে কোনো চাবি দেয় না। সব থেকে দুঃখের বিষয় ৬-৭ তলাবিশিষ্ট এত বড় একটি ভবনে একটি বাইসাইকেল পার্কিংয়ের জায়গা নেই।

অনার্স শেষ হওয়ার পর ছাত্রীনিবাস ছেড়ে বাসা ভাড়া নিয়েছেন আরফিন অরশি সিফা। তিনি বলেন, লেখাপড়া শেষে ছাত্রী নিবাস থেকে সরেই বিপদে পড়েছি। ঢাকায় পড়ুয়া সব মেয়েই এমন সমস্যার মুখোমুখি হন। ঢাকায় মেয়েদের মেস বা হোস্টেলের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। মেয়ে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার পর একমাত্র ভরসা সাবলেট। এখানে অতিরিক্ত ভাড়ার পাশাপাশি নিজের প্রাইভেসি এবং নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে ব্যাচেলর নারী শিক্ষার্থীদের চলতে হয়।

বাংলাদেশ মেস সংঘের মহাসচিব আয়াতুল্লাহ আকতার যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা শহরে মেস ভাড়া পেতে বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে নানা বঞ্চনার শিকার হতে হয়। দেশের শিক্ষিত ৯৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো সময় মেসে বা হলের বাসিন্দা। আমাদের সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর থেকে জনগণের মাঝে অনেক সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। এখন অনেক বাড়িওয়ালা ব্যাচেলরদের ভাড়া দেন।

0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post